অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম

কয়রা ডেস্ক : কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে নষ্ট হতে বসেছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম। দীর্ঘদিন ধরে এসব সরঞ্জাম নষ্ট থাকায় চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা করার সুযোগ থাকা সত্বেও বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল থাকায় প্রায় তিনগুণ টাকা দিয়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে রোগীদের এসব পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে হচ্ছে। এতে করে বেশী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগীদের। সুযোগ বুঝে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাইরের ক্লিনিক মালিকরা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে বিকল হয়ে রয়েছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইিউ) স্থাপিত একটি এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট (ইটিটি) মেশিনসহ দু’টি। প্রায় একই সময় ধরে বিকল রয়েছে দু’টি ইকো কার্ডিওগ্রাম (ইকো) মেশিন। এছাড়া হাসপাতালের চারটি আল্ট্রাসনো মেশিনের মধ্যে তিনটি, ১৮টি সাকার মেশিনের মধ্যে ১৩টি, ছয়টি ইসিজি মেশিনের মধ্যে তিনটি, পাঁচটি অ্যানেসথেশিয়া মেশিনের মধ্যে চারটি, চারটি কার্ডিয়াক মনিটরের মধ্যে দুইটি, ছয়টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে চারটি, তিনটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি, সিসিইউ’র চারটি এসির মধ্যে দুইটি ও বিদ্যমান একটি বায়ো কেমিস্ট অ্যানালাইজার দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অথচ এগুলো মেরামতের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে এভাবে দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটে ইটিটি ও ইকো মেশিন স্থাপনের শুরুতেই রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষা করানো হতো। পরবর্তীতে মেইনটেনেন্স ফি বাবদ রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হতো মাত্র দুইশ’ টাকা। প্রথম থেকে  মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আরিফ আহম্মেদ একাই রোগীদের এসব পরীক্ষা করতেন। পরবর্তীতে ডাঃ সঞ্জয় সরকারও মাঝে মধ্যে এসব পরীক্ষা করতেন। কিন্তু  ডাঃ আরিফ আহম্মেদ ও ডাঃ সঞ্জয় সরকার পদোন্নতি পেয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হওয়ার পর সদর হাসপাতালের ইটিটি ও ইকো মেশিনের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। যেখান থেকেই মূলতঃ শুরু হয় রোগীদের ভোগান্তি। যে টেস্ট সদর হাসপাতাল থেকে মাত্র দুইশ’ টাকায় করা যেতে বাইরের ক্লিনিকে সেই ইটিটি টেস্ট করতে নেয়া হয় পনের শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। ক্লিনিকে আলাদাভাবে ইকো করতে নেয়া হয় পাঁচ থেকে সাতশ’ টাকা। এদিকে ব্যবহার না করার ফলে অযতœ অবহেলায় ফেলে রাখার কারনে নষ্ট হয়ে যায় ইটিটি ও ইকো মেশিন। একইভাবে হসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার ও পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে বাইরে থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে একদিকে যেমন সাধারণ রোগীদের দুই থেকে তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, তেমনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।
হাসপাতাল মোড়ের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্যাশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাবুলিয়া গ্রামের সুরত আলী জানান, দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিল একটু কমানোর জন্য। কিন্তু অনেক দেন দরবার করার পরও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ টাকা কমাতে নারাজ।  তিনি বলেন, যে পরীক্ষা সদর হাসপাতালে করতে লাগতো ১২০০ টাকা, সেই পরীক্ষা এখানে ২৫০০ টাকা। একটু কম নিতে বলছি, কিন্তু নিচ্ছে না। সদর হাসপাতালে পরীক্ষা করালেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সদর হাসপাতালের মেশিন নষ্ট। তাই ডাক্তার সাহেব বাইরে থেকে পরীক্ষাগুলো করাতে বলেছেন। কিন্তু এতো টাকা পাব কোথায়?
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিছুর রহিম বলেন, চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষকে পায়ে পায়ে হয়রানি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলে হাসপাতালের মূল্যবান এসব চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো এতো দিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতো না। সাধারণ মানুষকেও হয়রানি-দুর্ভোগের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হতো না। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ তহিদুর রহমান বলেন, আমি ১৩ মার্চ এখানে যোগদান করেছি। এসেই জানার চেষ্টা করেছি হাসপতালের কোথায় কি সমস্যা রয়েছে। চলতি মাসেই বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হবো। আশা করি স্বাস্থ্য সেবায় সাতক্ষীরা এগিয়ে যাবে।

Posted by #amadinews

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কয়রা সহ খুলনায় দেড় বছরে বাল্যবিয়ের শিকার ৩ সহস্রাধিক ছাত্রী

কয়রায় কার্তিক হত্যা মামলার প্রধান আটক

যা ছিল চাওয়া, তা হল পাওয়া বিদায়ী ম্যাচ জিতলেন মাশরাফি