খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পসমূহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার তাগিদ

কয়রা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ড. নমিতা হালদার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গত তিন বছর আছি। এ সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর স্থাপনার উদ্বোধন করিয়েছি তাঁর হাত দিয়ে। কিন্তু খুলনাতে তাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) দিয়ে উদ্বোধন করাতে আনতে পারিনি। আমার দুঃখ! আমার এলাকা খুলনাতে দৃষ্টিনন্দন তেমন কিছুই দেখছি না!” সরকারি দপ্তরের সমন্বয়হীনতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “প্রধামন্ত্রীর অঙ্গীকার দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিত করা। কোন মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকে ও অন্যান্য লক্ষ্যপূরণে আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করি তবে প্রতিশ্র“তি পূরণ করা সম্ভব।” প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন ও খুলনা জেলার উন্নয়ন প্রকল্পসহ সার্বিক বিষয়ে গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় খুলনা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় খুলনা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার উন্নয়নমূলক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়নের অন্তরায় চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের সুপারিশ পেশ এবং শহরকে বাসযোগ্য করার নিমিত্তে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। মহানগরীর বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন দপ্তর-বিভাগ যাতে তার কার্যপরিধি অনুযায়ী কাজ করতে পারে এ লক্ষে কমিটি একমাস অথবা তিন মাস পর পর সভা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অথবা সুপারিশসহ অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসককে সদস্য সচিব করে গঠিত এ কমিটির হবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কেসিসি, কেডিএ, গণপূর্ত, সওজ, পাউবো, জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য, রেলওয়েসহ সরকারী দপ্তরের সকল বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত প্রকল্পগুলো আর কতকাল টেনে নিবো। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পগুলো শেষ করুন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পসমূহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে গল্লামারী-বটিয়াঘাটা-নলিয়ান সড়কসহ অন্যান্য রাস্তা এবং আঠারো মাইল থেকে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়েসহ প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্র“ত প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ে নির্মাণ করতে আহ্বান জানান। একই সাথে আগামী কর্মদিবস ২ মে এই তিন বিভাগ আঠার মাইল থেকে দক্ষিণ বেদকাশি পর্যন্ত নির্মণাধীন এশিয়ান হাইওয়ের অনিষ্পন্নকৃত স্থানটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ময়ূর নদী খুলনা শহরের প্রাণ। ময়ূর নদী বাঁচলে খুলনা শহর বাঁচবে। ময়ূর নদীর সাথে সংযুক্ত ২২টি খালে পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক রাখতে সমন্বয়সহ জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে। সব খাল খনন করতে হবে। বিশেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের খালটি খনন করতে হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি শহর সংলগ্ন ময়ূর নদী ও অন্যান্য নদীসমূহের সংযোগ খালগুলো সচল করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেন। একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি খুলনা রেলওয়ের আধুনিক রেল স্টেশনের পাশে ফুটপাত প্রশস্তকরণ ও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য জনগণের কাছে দর্শনীয় করার জন্য এর দেয়াল নিচু করাসহ লোহার শিক দিয়ে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেন তিনি। নগরীর বর্জ্য টিটমেন্টপ¬ানের মাধ্যমে শোধনের গুরুত্বারোপ করেন সিটি মেয়র। অনেকগুলো প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে বলে ব্যাখা করে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে ডিএসএল নামের খাতটি সমন্বয়ের আহ্বান জানান তিনি।
জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, দাকোপে দু’টি ব্রীজ নির্মাণ করে গল্ল¬ামারী থেকে নলিয়ান ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণ করা হলে সুন্দরবনে ব্যাপক দেশী-বিদেশী পর্যটন সমাগম ঘটবে। খুলনা শহরের রাস্তা খুঁড়াখুঁড়িতে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সড়কগুলো মেরামত করার আহ্বান জানান তিনি। একই সাথে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু, খুলনা জেলা স্টেডিয়াম, উপজেলা স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত প্রকল্প ও খুলনার সমস্যার চিত্র পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন সভাপতি জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। তিনি বর্ণনা করেন, সামান্য বৃষ্টিতে খুলনা শহরের রয়েল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা, বর্জ্য জট, সড়ক ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটি। নদীÑখাল অবৈধ দখল, যানজট, অস্বাভাবিক সংখ্যায় ইজিবাইক, ফুটপাথ অবৈধ দখল, কার পার্কিং এ অব্যবস্থাপনা, হকার উচ্ছেদসহ পুনর্গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় জানান হয়, খুলনা তেরখাদা ২৩ কি.মি. সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কে পরিণত করাসহ ১৮ ফুট প্রশস্ত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খুলনা কৃষি ইনস্টিটিউটের জায়গা অধিগ্রহণসহ অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেই খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের বাকী কাজ সম্পন্নে প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ, নভোথিয়েটার নির্মাণ প্রকল্প, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বাকি কাজ, কয়রা উপজেলায় স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নিমার্ণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত করতে একান্ত সচিব প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ মনিরুজ্জামান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ ফারুক হোসেনসহ সংশ্লি¬¬ষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
কেসিসি’র সচিব মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্র“ত ২০০ কোটি টাকার মধ্যে গত পাঁচ বছরে ১৫৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। চলতি বছরে মাত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এখনো ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা অবরাদ্দকৃত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ছাড় এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া নতুন প্রকল্পগুলো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হচ্ছে না; সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
প্রকল্পের আলোচনায় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী জানান, বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের ৪ একর জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতাল প্রকল্পের ৪০ কোটি টাকার অনুমোদন এখনো পাননি বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকৌশলী বলেন, নার্সিং কলেজটির টেন্ডার খুব দ্রুত হবে। বয়রায় নার্সিং ইনস্টিটিউটের তিন একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল ইসলাম বলেন, “পাইকগাছার কৃষি কলেজটির ভূমি সাইট সিলেকশনে জটিলতা দেখা দিয়েছে।” উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ভূমির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ওই স্থানেই কলেজটি স্থাপিত হবে। প্রক্রিয়া শুরু করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্র“ত ৫টি প্রকল্প রয়েছে সওজ-এ। ওই পাঁচটি প্রকল্প নিয়েই জটিলতা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিডি ও সওজ’র সমন্বয়হীনতার বর্ণনা দেন তিনি।
এলজিডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তারিকুল ইসলাম জানান, আঠারো মাইল থেকে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়েটির মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪ দশমিক ৯০ কি.মি. রাস্তার জন্য প্রকল্পটি বিঘিœত হচ্ছে। পাউবো’র ভেড়ীবাঁধের ওপরের না দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক নির্মাণ করলে খরচ কম পড়বে বলে জানান তিনি।
পাউবো’র প্রকৌশলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত ভূতিয়ার বিল প্রকল্পের ৫৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চিত্রা নদী খনন কাজ চলছে। তবে অবৈধ দখলের কারণে কিছু সদস্যা হচ্ছে বলেও উল্লে¬খ করেন তিনি।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, কয়রায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহসান খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখছে না উল্লে¬খ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জেলা স্টেডিয়ামের কাজ ঠিকাদার ইচ্ছা করেই ঝুলিয়ে রাখছে। কয়রা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণের কথাটি কেউ বলছে না। অথচ, প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।


Posted by কয়রার সংবাদ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কয়রা সহ খুলনায় দেড় বছরে বাল্যবিয়ের শিকার ৩ সহস্রাধিক ছাত্রী

কয়রায় কার্তিক হত্যা মামলার প্রধান আটক

যা ছিল চাওয়া, তা হল পাওয়া বিদায়ী ম্যাচ জিতলেন মাশরাফি